অনুভব
লিখেছেন লিখেছেন মামুন ৩০ অক্টোবর, ২০১৪, ০৩:৩৯:৫৭ দুপুর
ঠিক ভরদুপুরে বাস থেকে নামল রেজাউল।
প্রচন্ড গরমে মাথার চাঁদি ফেটে যাবার দশা। পীচ ঢালা পথটিও উত্তপ্ত। কেমন গরমের ভাপ আসছে রাস্তা থেকে। যায়গায় যায়গায় পীচ গলে গেছে, দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
প্রচণ্ড পিপাসা নিয়ে রেজাউল গলির মাথার মিষ্টির দোকানে ঢোকে। ক্যাশে বসা লোকটির জিজ্ঞাসু চাহনিকে উপেক্ষা করে টেবিলে রাখা গ্লাস নিয়ে পানি খায়। দ্বিতীয় গ্লাস শেষ করে ক্যাশের অপরিচিত লোকটির দিকে তাকিয়ে হাসে। এই সীটে এর আগে অমর ঘোষ বসতেন । মনে হয় এর বাবা। মিষ্টির দাম জিজ্ঞেস করল।
সবচেয়ে কমদামের কেজি খানেক মিষ্টি নিয়ে নিজের বাড়ির দিকে হেঁটে চলে। পছন্দের মিষ্টিগুলো কিনতে না পারার ব্যর্থতা আর প্রচন্ড গরমে কাকের মত মুখ হা করা অনুভূতি- এসব ওর হৃদয়ে মিশ্র অনুভূতি জাগিয়ে তোলে। বৃদ্ধ বাবা সহ ঘরে আরো ছয়জন সদস্য। এক কেজি মিষ্টিতে কি হবে? কিন্তু এর থেকে বেশী কিনার সামর্থ্যও তার নাই। মাসের ২৫ তারিখ মোটে। সামনের মাসের ১০ তারিখে বেতন হবে। শহরের বাসায় বউ ছেলেমেয়ে... এখানে বাবা-মা আর অন্যরা। সবাইকে ই তো দেখতে হয়।
রাস্তার পাশে হাইস্কুলের বাউন্ডারি ওয়ালের ছায়ায় ছায়ায় হেঁটে যেতে যেতে রেজাউলের বেশ আগের কথা মনে পরে যায়। তখন ছোট কুমিরা জেল স্কুলে পড়ত। মাসের একটি বিশেষ দিনে বাবা-মায়েরা দেখা করতে আসতেন। সবার বাবারা কত কি খাবার নিয়ে আসতেন। পাশে বসিয়ে আদরের বখে যাওয়া সন্তানকে নিজে হাতে খাইয়ে তৃপ্তি মিটাতেন। ওর বাবা আসতেন প্রায় সময়েই খালি হাতে। কোনো কোনো সময় হয়ত এক হালি কলা কিংবা চারটা পেয়ারা... পথের পাশের বাজার থেকেই কিনে নিতেন হয়ত। নিজের পায়ে শেকল বাঁধা অবস্থায় অন্যদের বাবা মায়ের পাঠানো আদরটুকু অন্যদেরকে উপভোগ করতে দেখে, নিস্ফল আক্রোশে ভিতরে ভিতরে ফেটে পড়ত। নিজের হাতে এক হালি কলা কিংবা কাঁচা পাকা পেয়ারা নিয়ে অসহায় বাবার চলে যাওয়া দেখত বারান্দার শিকের ভিতর দিয়ে। দূরে অপসৃয়মান একজন বাবা... মাথা নিচু করে হেঁটে চলেছেন... বাস ভাড়াটুকু-ই যার সম্বল। কিন্তু সেই সময়ে রেজাউল কি বাবার সেই অসহায়ত্বটুকু বুঝতে চাইত? উপলব্ধিতে ওর জুড়ে ছিল কিছু প্রশ্নবোধক মার্ক! কেন? কেন? কেন?
আজ সেই প্রশ্নের উত্তর নিজের থেকেই সে পেয়েছে।
পঁচিশ বছর পরে একজন নতুন বাবা এক পুরনো বাবার কিছু পতিত সময়ের অনুভবে বিলীন হয়... নিজের ছায়ায় নিজেকে খুঁজে পায়...
ছায়া আর কায়া মিলে যে আমি, তাতে কেন এতো বৈচিত্র্য?
ভাবে আর হাঁটে... এক কেজি মিষ্টির প্যাকেট... আর কিছু জীর্ণ দীন মনোভাবও সাথে সাথে আসে।
বিষয়: সাহিত্য
১৩১১ বার পঠিত, ২৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনি পারেনও বটে। আচ্ছা আপনার মাথার সবটুকুতেই কি মগজ? এত লেখা কোথায় থাকে?
অসাধারণ অসাধারণ
না, আমার মাথার সবটুকুতেই মগজ নেই। আর লিখাগুলো আমার হৃদয়ে থাকে।
শুভেচ্ছা রইলো আপনার জন্য।
আপনার কোমল হৃদয়ের জন্যই এ কথা বলতে পেরেছেন, না হলে আমাদের আশেপাশে কত বিত্তশালী রয়েছেন, তাঁরা কি কখনো আপনার মত উপলব্ধি করেন?
অনুভূতি রেখে যাবার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
আপনি আমার প্রথম দিকের কিছু লিখা পড়লে বুঝতে পারতেন, এই সব অণুগল্পগুলো আসলে এক ধরণের ট্রেইলার, যা আমি পাঠকদেরকে অগ্রীম দিয়ে থাকি। প্রতিটি অণুগল্পই এক একটি বড় কিংবা নিদেনপক্ষে ছোটগল্পে পরিণত হবে ইনশা আল্লাহ। অণুগল্প পাঠককে ভাবায়। আর সেই অণুগল্পটি যখন লেখকের হাতের ছোঁয়ায় ছোট বা বড় গপে পরিণত হয়, তখন পাঠক এবং লেখকের ভিতরকার অনুভবের সাদৃশ্যটুকু বুঝতে পারা যায়।
ইনশা আল্লাহ, লিখার ইচ্ছে রয়েছে।
আপনাদের আবদার, মাথায় তুলে নিলাম।
অনেক ধন্যবাদ।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
আপনাকে ইদানিং কম দেখছি কেন? লিখাও তো পোষ্ট করছেন না।
আপনার লিখা পড়বার অপেক্ষায় রইলাম।
অনুভূতি রেখে যাবার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
বারাকাল্লাহু ফীহ।
অনুভূতি রেখে যাবার জন্য শুভেচ্ছা নিরন্তর।
সুন্দর অনুভূতি রেখে গেলেন।
শুভেচ্ছা রইলো।
সময়ের বিবর্তনের সাথে সাথে উপলব্ধিরও কেমন পরিবর্তন! যে বিষয়টাই একসময় প্রচন্ড খারাপ হয়ে ধরা দিত,নিজের বেলায় তা ব্যর্থতার চাবুক হয়ে নিজেকেই আঘাত করে সময়ের বিবর্তনে।
অনেক ভালো লাগলো,ধন্যবাদ অজস্র!!!
গভীর অনুভূতি রেখে গেলেন। অনেক ধন্যবাদ।
কসট। তবু বলছি এটা দুই বা তিন পরব হলে ভাল
হত। অপেকখাই রইলাম
ইনশা আল্লাহ, দেখা যাক , কতদূর কি করতে পারি।
শুভকামনা রইলো।
মন্তব্য করতে লগইন করুন